September 27, 2025, 3:05 pm
কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন/
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত এবং পণ্যবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে এক দশক আগে স্বাক্ষরিত মোটরযান চুক্তির (এমভিএ) প্রটোকলের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের উদ্যোগ এটাই প্রথম।
রোববার (১৩ এপ্রিল) নেপালি সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, শুধু মোটরযান চুক্তিই নয়, বিবিআইএন দেশগুলো আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আন্তঃসংযুক্ত গ্রিড গড়ে তোলার কথাও ভাবছে।
বিবিআইএন-এমভিএর লক্ষ্য হচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচলের মাধ্যমে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য ও সংযোগে বিদ্যমান বাধা ও বিধিনিষেধ দূর করা।তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার সিদ্ধান্ত বিবিআইএন-এমভিএ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। এই সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্য ভারতের স্থল শুল্ক স্টেশন, বন্দর ও বিমানবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশে যেতে পারতো।
২০১৫ সালের ১৫ জুন ভুটানের থিম্পুতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী, ভারতের সড়ক পরিবহন ও জাহাজ পরিবহনমন্ত্রী এবং নেপালের ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রী এই মোটরযান চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, এর কার্যকরকরণে প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তি যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে সহায়তা করবে। প্রটোকলে পাইলট প্রকল্প চালুরও অনুমোদন রয়েছে।
প্রটোকল অনুযায়ী, ভুটান ছাড়া বাকি তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল—সব ধরনের যান চলাচলের অনুমতি দেবে। এতে পণ্য পরিবহনের জন্য তিনটি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে—হালকা বাণিজ্যিক যান (৭ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত), মাঝারি বাণিজ্যিক যান (৭ হাজার ৫০০ কেজি থেকে ১২ হাজার কেজি) ও ভারী বাণিজ্যিক যান (১২ হাজার কেজির বেশি)।
এই প্রটোকল চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কয়েকটি ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক যাত্রা) পরিচালনা করা হয়, যেখানে দেখা যায় নির্বিঘ্নে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সম্ভব। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতা–ঢাকা–আগরতলা (৬০০ কিমি) রুটে, ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা–দিল্লি (১ হাজার ৭৮০ কিমি) রুটে এবং ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা–কাঠমান্ডু রুটে পরীক্ষামূলক বাস চলাচল করা হয়।
বিবিআইএন-এমভিএ বাস্তবায়নে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তাদের প্রস্তাবিত নতুন ট্রায়াল রুটগুলো হলো কাঠমান্ডু–ভৈরহাওয়া–সুনৌলি–লখনৌ–কানপুর–নয়াদিল্লি এবং কাঠমান্ডু–বিরগঞ্জ–রক্সৌল–কলকাতা (নেপাল-ভারত)।
নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রস্তাবিত ট্রায়াল রুট হচ্ছে কাঠমান্ডু–কাকরভিট্টা–পানিট্যাংকি–শিলিগুড়ি–ফুলবাড়ি–বাংলাবান্ধা–মোংলা/চট্টগ্রাম।
চুক্তিটি কার্যকর হলে নেপাল ভারতের চারটি বন্দর—কলকাতা, হলদিয়া, বিশাখাপত্তনম ও মুন্দ্রা—সরাসরি ব্যবহার করতে পারবে। তবে এই উদ্যোগে নেপালের বেসরকারি খাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা ও বাজার হারানোর ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
তাছাড়া, নেপালের পরিবহন কোম্পানি ও চালকরা ভারতের রুটে অভ্যস্ত না হওয়ায় সীমানা পেরিয়ে গাড়ি চালানো কঠিন হবে। সীমান্তে প্রয়োজনীয় রাস্তা ও ল্যাব টেস্টিং সুবিধার অভাবও সমস্যা তৈরি করছে।
এছাড়া, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় দুর্বল বলেও জানিয়েছে এডিবি। অন্যদিকে, নেপালে যানবাহনে উচ্চ হারে শুল্ক থাকায় পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়, যা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে।
এতে পারমিট; ফি ও চার্জ; যানবাহন ট্র্যাকিং ব্যবস্থা; অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি, দুর্ঘটনা ও যানের যান্ত্রিক গোলযোগ; মোটর দায়বদ্ধতা বিমা; যানবাহনের স্পেসিফিকেশন; যানবাহনের সংখ্যা ও পরিমাণ; কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়; যাত্রী ও চালকদের সীমান্ত পারাপার; আন্তর্জাতিক ট্রানজিট; অনুমোদিত অপারেটরের শাখা অফিস স্থাপনের শর্তাবলি এবং নিষিদ্ধ/নিয়ন্ত্রিত পণ্যের তালিকার কথা রয়েছে।
প্রটোকলে আরও বলা হয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যে একটি ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করা হবে, যাতে যানবাহনের চলাচল ও পণ্যের গমনাগমন ট্র্যাক করা যায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
যানবাহনের চালক ও ক্রুরা স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর নাগরিক হতে হবে এবং তাদের বৈধ পাসপোর্ট অথবা অন্যান্য ভ্রমণ দলিল থাকতে হবে।
যখন ভিসা প্রয়োজন হবে, তখন চালক বা ক্রুর আবেদনপত্রের সঙ্গে ‘ক্রু আইডেন্টিটি কার্ড’-এর (অনুচ্ছেদ–৩ অনুযায়ী) কপি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দিতে হবে। এই পরিচয়পত্র কাগজে অথবা স্মার্ট কার্ড হিসেবে হতে পারে।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে একটি স্থায়ী জাতীয় স্থল পরিবহন সুবিধা প্রদান কমিটি গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট সচিব এবং সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধি থাকবেন। এই কমিটি চুক্তি ও প্রটোকল বাস্তবায়নে সমন্বয় ও তদারকি করবে।
একটি যৌথ স্থল পরিবহন কমিটিও গঠন করা হবে, যা চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে এবং যেকোনো বিরোধের সমাধানের জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
একইভাবে, একটি কাস্টমস উপকমিটি গঠন করা হবে, যা মোটরযানের প্রবেশ ও প্রস্থানের নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।